০১ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৯:৫৫

শিরোনাম স্বাস্থ্য খাতে পদোন্নতি: ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ বঞ্চিত শত শত চিকিৎসক Logo ৮ মাস পর খুলল সেন্টমার্টিন: দিনে মাত্র ২০০০ পর্যটক, রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ Logo ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল, ফেব্রুয়ারিতেই ভোট: নির্বাচন কমিশনার Logo হাসিনা পালালেও তাদের নেতাকর্মীদের পাহারা দিচ্ছি: অ্যাটর্নি জেনারেল Logo পনেরো বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে পরিষ্কার করা যায় না: ধর্ম উপদেষ্টা Logo কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ. লীগের ৩ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Logo চার দিনের সফরে পাবনা যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি Logo ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আরও পাঁচ শতাধিক রোগী Logo

সাবেক এমপি নদভী দম্পতিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাবেক এমপি নদভী দম্পতিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১৫:৪২

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ট্রাস্টের অধীন আইআইইউসি টাওয়ার থেকে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া সুলতানাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক কমল চক্রবর্তী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক এমপি ও আইআইইউসি ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভীকে। এ ছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন—আইআইইউসির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ট্রাস্টের সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর, ড. ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমেদ চৌধুরী, নদভীর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা, এবং মোহাম্মদ খালেদ মাহমুদ।

অন্যদিকে মামলায় আরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন—প্রফেসর ড. মো. ফসিউল আলম, প্রফেসর মো. আবদুর রহিম, ড. মো. শামসুজ্জামান, মোহাম্মদ বদিউল আলম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মুহাম্মদ শফিউর রহমান, অধ্যাপক ড. মাহি উদ্দিন, অধ্যাপক আফজল আহমদ এবং ড. মোজাফফর হোছাইন নদভী।

দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৬ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আইআইইউসি ট্রাস্টের ১২ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ট্রাস্টটি একটি অলাভজনক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যার আয় শিক্ষাবৃত্তি, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা, ইসলামী গবেষণা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার কথা। কিন্তু আসামিরা ট্রাস্ট আইন ও বিধি উপেক্ষা করে এই অর্থ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ২০০৫ সালে ট্রাস্টটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় একটি প্লট ক্রয় করে এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সেখানে ১৫ তলা বাণিজ্যিক ভবন ‘আইআইইউসি টাওয়ার’ নির্মাণ করে। ভবনটি ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।

যদিও ট্রাস্ট সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার কথা, দুদক জানায়—তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে সম্মানী, বোনাস, টিএ/ডিএ, মোবাইল বিল ও উৎসব ভাতা নিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ড. নদভী মাসে ১০ লাখ ৯ হাজার টাকা সম্মানী, জ্বালানি বাবদ ৫০ হাজার ও মোবাইল বিল বাবদ সাত হাজার টাকা নিতেন। পাশাপাশি ঈদে প্রতিবার তিনি ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা উৎসব ভাতা পেতেন।

তাঁর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা টাওয়ার থেকে মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা সম্মানী ও ৩ হাজার টাকা মোবাইল বিল পেতেন। দুবাইয়ে চিকিৎসার সময় তাঁর জন্য টাওয়ার ফান্ড থেকে ৩০ লাখ টাকা পাঠানোর ঘটনাও দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

এছাড়া ট্রাস্টের অন্যান্য সদস্যরাও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভাতা ও সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। এমনকি জুলাই ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত আইআইইউসি টাওয়ারের কোনো আয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবপত্রে দেখানো হয়নি।

দুদক জানায়, টাওয়ারের ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে চ্যান্সেলরের অনুমতি ছাড়া প্রায় চার লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ সৌদি আরবে পাঠানো হয়, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৪৪(৬) ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

আইআইইউসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টাওয়ারটি থেকে মাসে গড়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকা আয় হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করার কথা। কিন্তু তিন বছরে এভাবে প্রায় ৩২ কোটি টাকা পর্যন্ত নয়ছয় হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

দুদক বলেছে, পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন